রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন

৩০ পেরোনো প্রার্থীদের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় : সরকারি চাকরিতে আবেদন

৩০ পেরোনো প্রার্থীদের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় : সরকারি চাকরিতে আবেদন

স্বদেশ ডেস্ক:

করোনা মহামারীতে ইতোমধ্যে যেসব চাকরিপ্রার্থীর বয়স ৩০ বছর পেরিয়ে গেছে, তাদের আবেদন করার সুযোগ দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত যাদের বয়স ৩০ বছর হয়েছে তারা আবেদনের সুযোগ পাবেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিতব্য সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে তারা আবেদন করতে পারবেন। গত বছরের মতো এবারও এমন প্রস্তাব তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে বলে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে দেশে টানা ৬৬ দিন লকডাউন ছিল। ওই সময়ের মধ্যে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু যেহেতু প্রার্থীদের অনেকের আবেদনের বয়স শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাদের সুযোগ দিতে বয়সে ছাড় দিয়ে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এ রকম সুযোগ দিয়ে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু চলতি বছরও করোনার কারণে নিয়োগ বন্ধ এবং দীর্ঘদিন ধরেই দেশে লকডাউন চলছে, সেহেতু চাকরিপ্রত্যাশীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আবারও বয়সে ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের খসড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরে যাবে। তিনি খসড়া অনুমোদন দিলে তা প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিললে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা চিঠি দিয়ে জানানো হবে।

কর্মকর্তারা জানান, বিসিএস ছাড়া অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে এ সুযোগ পাবেন ৩০ বছর পেরোনো প্রার্থীরা। কারণ, বিসিএসের বিজ্ঞপ্তিগুলো নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এ জন্য এ ক্ষেত্রে বয়স আগের মতোই থাকবে। সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সাধারণ প্রার্থীদের বয়স বয়সসীমা ৩০ বছর। বয়স ছাড়ের বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজমকে ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।

দেড় বছর ধরে দেশে সরকারি চাকরির নিয়োগ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর অধীনস্থ দপ্তরগুলোতে প্রায় চার লাখ শূন্য পদ আছে। এসব পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও বারবার লকডাউন ঘোষণার কারণে পরীক্ষা নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ তো হচ্ছেই না, উল্টো অনেক প্রতিষ্ঠানে ছাঁটাই চলছে। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাবে করোনা মহামারীর কারণে সবচেয়ে ঝুঁঁকিতে তরুণ প্রজন্ম। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশই বেকার হয়েছেন। করোনার কারণে তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে। সংস্থাটির হিসাবে সবাই যদি পূর্ণকালীন কাজ করতেন (সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা), তা হলে বাংলাদেশে করোনায় ১৬ লাখ ৭৫ হাজার তরুণ-তরুণী কাজ হারিয়েছেন।

এদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীরা। করোনায় তাদের বয়স আরও বেড়ে যাওয়ায় এই আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে। ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ চাই’ নামে ফেসবুক পেজের একটি প্ল্যাটফর্মে বয়স বাড়ানোর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন কয়েক লাখ বেকার তরুণ-তরুণী। লকডাউন উঠে গেলে তারা ফের মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, করোনার কারণে বয়সে ছাড় দেওয়ার উদ্যোগটা ইতিবাচক। এটা দরকার আছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করার কোনো যুক্তি নেই। কারণ বর্তমানে ৩০ বছর বয়সই বেশি।

অবশ্য জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাবেক কনসালটেন্ট মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, করোনায় এমনিতে চাকরিপ্রার্থীদের জীবন থেকে দুই বছর চলে গেছে। করোনার প্রভাব আরও কমপক্ষে ৫ বছর থাকবে। এ জন্য কমপক্ষে আগামী ৫ বছরের জন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ করে দেওয়া খুবই জরুরি। এটাতে কোনো অসুবিধাই হওয়ার কথা নয়। কারণ অবসরের বয়স তো ৫৭ থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877